উসকানি ও রাষ্ট্রবিরোধী বক্তব্য দেয়ার অভিযোগে গ্রেপ্তার ‘শিশুবক্তা’ হিসেবে পরিচিত রফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে করা মামলায় পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইনের একটি ধারা যোগ করেছে পুলিশ।
২০১২ সালে করা ওই আইনের ৮ (৫) ধারা যুক্ত করায় এই ধর্মীয় বক্তার আরও দুই বছরের কারাদণ্ড অথবা এক লাখ টাকা জরিমানা হতে পারে।
মঙ্গলবার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে বিষয়টি জানান গাজীপুর মহানগর উপ-পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ ইলতুৎমিশ।
তিনি জানান, ধর্মীয় জলসায় উত্তেজক বক্তব্য রাখা রফিকুল রাষ্ট্রবিরোধী বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করতেন। তিনি মোবাইল ফোনে নিয়মিত পর্নোগ্রাফি ভিডিও দেখতেন।
রফিকুলের বিরুদ্ধে মামলায় যে ধারাটি যুক্ত করা হয়েছে, তাতে বলা হয়েছে পর্নোগ্রাফি বিক্রি, ভাড়া, বিতরণ, সরবরাহ, প্রকাশ্যে প্রদর্শন বা যেকোনো প্রকারে প্রচার করলে বা যেকোনো উদ্দেশ্যে প্রস্তুত, উৎপাদন, পরিবহন বা সংরক্ষণ করলে; অথবা কোনো পর্নোগ্রাফি প্রাপ্তিস্থান সম্পর্কে কোনো প্রকারের বিজ্ঞাপন প্রচার করলে; বা এই উপ-ধারার অধীন অপরাধ বলে চিহ্নিত কোনো কার্য সংঘটনের উদ্যোগ নিলে তিনি অপরাধ করেছেন বলে গণ্য হবেন।
এই অপরাধের জন্য তিনি সর্বোচ্চ দুই বছর সশ্রম কারাদণ্ড অথবা এক লাখ টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবেন।
সংবাদ সম্মেলনে গাজীপুর মহানগর উপ-পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ ইলতুৎমিশ। ছবি: নিউজবাংলা
দেখতে খর্বকায় ও শিশুতোষ কণ্ঠের অধিকারী হওয়ায় রফিকুল ইসলাম ‘শিশুবক্তা’ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন। তবে তার বয়স ২৬ বছর বলে নিজে জানিয়েছেন।
রাষ্ট্রবিরোধী উসকানিমূলক ও ঔদ্ধত্যপূর্ণ বক্তব্য এবং বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অভিযোগে রফিকুলকে গত মঙ্গলবার দিবাগত রাত সাড়ে ৩টার দিকে নেত্রকোণার পূর্বধলার লেডির কান্দার নিজ বাড়ি থেকে আটক করে র্যাব-১৪-এর একটি দল।
পরদিন গাজীপুর মেট্রোপলিটনের গাছা থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করে র্যাব। এতে বলা হয়, বিভিন্ন সময়ে তিনি দেশ ও সমাজের জন্য উসকানিমূলক বক্তব্য দিয়ে সমাজে বিশৃঙ্খলাসহ জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছেন।
এরপর ১১ এপ্রিল রফিকলের বিরুদ্ধে বাসন থানায় ডিজিটাল আইনে আরেকটি মামলা হয়।
এজাহারে উল্লেখ করা হয়, রফিকুল বাংলাদেশের স্বার্থপরিপন্থি অপতৎপরতায় লিপ্ত। ধর্মীয় অর্থাৎ কোরআন-হাদিসের অপব্যাখ্যা দেয়ার মাধ্যমে সাধারণ মানুষকে উসকানি দিয়ে আইনশৃঙ্খলা ভঙ্গ করতে উদ্বুদ্ধ করেন।
তিনি তার ওয়াজে প্রতিবেশী বন্ধু রাষ্ট্রের প্রতি শত্রুতামূলক মনোভাব ও সরকারের প্রতি ঘৃণা সৃষ্টির জন্য উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বক্তব্য দিয়ে সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করেন বলেও অভিযোগ করা হয়েছে এজাহারে।
গাজীপুর মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার ইলতুৎমিশ বলেন, রফিকুলের ৭ দিনের রিমান্ড চেয়ে গাজীপুর জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালতে আবেদন করা হয়েছে।
এডিসি মোহাম্মদ আহসান, গাছা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইসমাইল হোসেন ও পরিদর্শক তদন্ত নন্দলাল এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
রফিকুলের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ
এর আগে ২৫ মার্চ মতিঝিল এলাকায় ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঢাকা সফরবিরোধী মিছিল ও ভাঙচুরের সময় রফিকুল ইসলাম মাদানীকে আটক করেছিল রমনা থানার পুলিশ। সেখানে তিনি মৌখিক আশ্বাস দিয়েছিলেন, আর এমন উসকানিমূলক বক্তব্য দেবেন না।
কথা রাখেননি রফিকুল। বরং ছাড়া পেয়ে তার উত্তেজনা ছড়ানো বক্তব্য আরও বাড়ে। নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ের একটি রিসোর্টে কথিত দ্বিতীয় স্ত্রীসহ স্থানীয়দের হাতে হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হকের অবরুদ্ধ হওয়া নিয়ে একাধিকবার উসকানিমূলক বক্তব্য দেন রফিকুল। এরপরই তাকে আটক করার খবর দেয় র্যাব।
মামলায় তার বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ হিসেবে গত ১০ ফেব্রুয়ারি গাজীপুরের বোর্ড বাজার এলাকার একটি ওয়াজের বক্তব্যকে উল্লেখ করা হয়েছে। সেখানে রফিকুল বলেন, ‘আমি মানি না রাষ্ট্রপতি, আমি কচুর প্রধানমন্ত্রী মানি না। কিসের প্রশাসনের অর্ডার? আমি কোনো অর্ডার মানি না। আমার সংবিধানে প্রধানমন্ত্রী নাই, রাষ্ট্রপতি নাই, এমপি নাই। আমি মানি না প্রধানমন্ত্রী, মানি না স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। আমাকে রিমান্ডে নিবা? জেলে নিবা? ফাঁসি দিবা তাই তো?’
এজাহারে রফিকুল ইসলাম আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল নন বলেও উল্লেখ করা হয়েছে।
রফিকুলের এসব ধারাবাহিক উসকানিমূলক বক্তব্যের কারণে তার অনুসারীরা ২৬ মার্চ ও পরবর্তী সময়ে বায়তুল মোকাররম মসজিদসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় সহিংসতা চালায়। বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি সম্পদের ক্ষতি করে বলে অভিযোগে বলা হয়েছে।